মুনিয়া - আনভিরের কথা মনে আছে তো ? সেই মুনিয়া ; কুমিল্লার খুব সাধারণ মধ্যবিত্ত পরিবারের কলেজ পড়ুয়া মেয়ে, যে থাকতো লাখ টাকা মাসিক ভাড়ার ফ্ল্যাটে। আর আনভির, বসুন্ধরার মালিক পুত্র।
কথা যা প্রকাশিত তা হলো, বিয়ের প্রলোভন দিয়ে মুনিয়াকে রক্ষিতা বানিয়ে রেখে ছিলো আনভির। কি হাস্যকর ব্যাপার ! বিয়ের প্রলোভন মানেটা কী ? মানে কি এ রকম , বিয়ে করবে বলে মৌখিক ভাবে লোভ দেখানো ? প্রলোভন দেখানো মহা অপরাধ। কারো প্রলোভনে প্রলুব্ধ হওয়া, সেটা নিশ্চই ছেলে খেলা না ? সে যাই হোক, ভোগবিলাসে উন্মত্ত প্রজন্মের মেয়েটি হয়তো টাকার ঝলকানিতে বেশামাল হয়ে গিয়ে ছিলো।
কিন্তু এমন করে বেশামাল হওয়ার জন্য ও প্রলোভনে প্রলুব্ধ হওয়ার জন্য নির্মম ভাবে জীবন দিতে হবে, এটা নিশ্চয়ই সে ভাবেনি। এই না ভাবাটা থেকে আমাদের শিক্ষা নিতে হবে। যেকোনো পথে পা বাড়াবার আগেই তার আগে পিছে কী হতে পারে, সেটা ভালো ভাবে বুঝার চেষ্টা করতে হবে। তা না হলে জীবনে নেমে আসতে পারে এমন অন্ধকার।
ঘটনা যাই হোক, মুনিয়া নামের মেয়েটি হয়তো মানসিক নির্যাতন ও চাপে আত্মহত্যা করেছে, না হয় তাকে আত্মহত্যা করতে বাধ্য করা হয়েছে অথবা তাকে নির্মম ভাবে হত্যা করা হয়েছে। এই তিনটির যাই ঘটুক, মেয়েটির সাথে যা ঘটেছে সেটা সমাজের একটি নগ্ন ও কদর্য চেহারাই প্রকাশ করেছে। আমরা সাধারণ মানুষ এই নির্মমতার ও কদর্যতার বিরুদ্ধে। আমরা চাই, এই ঘটনার সাথে জড়িত প্রতিটি অপরাধী সর্বোচ্চ শাস্তি পাক। কোনো প্রভাবেই যেনো তারা আইনের ফাঁকগলে বেরুতে না পারে। সামাজিক ভ্রষ্টাচারের বিরুদ্ধে এই মামলার রায় যেনো নজির হয়ে থাকে।
মুনিয়ার পোস্টমর্টেম রিপোর্টে না কি তাঁর শরীরে আঘাতের চারটি চিহ্ন পাওয়া গেছে। আর এই হত্যা মামলার অন্যতম সন্দেহ ভাজন আসামি, আনভির ও তার স্ত্রী গতকাল উচ্চআদালতে আগাম জামিন চাইতে গেলে বিজ্ঞ আদালত আনভিরের স্ত্রীর জামিন মজ্ঞুর করলেও তার জামিন আবেদন নামজ্ঞুর করে তাকে জেলহাজতে প্রেরণ করেছে।
এই হত্যা মামলায় কার কতো সাজা হবে সেটা পরের দেখা যাবে । কিন্তু টাকার জোরে এ দেশে এখনো যে হাজতবাস থেকে রেহাই পাওয়া যায়না, সেটা আবারো প্রমাণিত হলো। যারা এই নিয়ে নানা বিরুপ মন্তব্য করতেন, তারা নিশ্চয়ই নিজেদের ভ্রান্তিটা বুঝতে পেরেছেন।
আসলে, বিচার একটি জটিল প্রক্রিয়া। আপনি চাইলেই সেটাকে নিজের কবজায় নিতে পারবেন না। তবে বিভিন্ন মাধ্যমে হয়তো নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন। কিন্তু সেটাও সবক্ষেত্রে সম্ভব হবে না। কারণ, এখনো বহু মানুষ আছে যারা টাকার গন্ধে বেহুশ হয়ে যান না। সুতরাং বিচারহীনতার সংস্কৃতি থেকে এভাবেই বেরিয়ে আসবে বাংলাদেশ।
সুবিচার পাক নিহতের স্বজন। কলঙ্কমুক্ত হোক সুধীসমাজ।
সাঈদ আনাম